চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবল সংকট থাকায় সরিষাবাড়ী উপজেলার একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত শিশু, নারী, পুরুষ ও বৃদ্ধরা প্রতিদিন কাঙ্খিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরিষাবাড়ী উপজেলায় প্রায় ৩ লাখ ১৬ হাজার মানুষ বসবাস করে। ১৯৬৩ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট সরিষাবাড়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়। ২০০৮ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। ফলে ৩১ শয্যার ভিতরেই ৫০ শয্যা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
মাঝে মধ্যে শয্যা সংকট থাকায় রোগীদের জায়গা হয় মেঝে ও হাসপাতালের বারান্দায়। একমাত্র স্বাস্থ্যসেবাদানকারী সরকারি এ প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন প্রায় ৩-৪ শতাধিক মানুষ। চিকিৎসক সংকট থাকায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিচালনার জন্য ২৯টি পদ রয়েছে। বর্তমানে সেখানে কাগজ কলমে চিকিৎসক রয়েছেন ১০ জন। এদের মধ্যে সরেজমিনে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন ৭ জন। দশজনের মধ্যে মেডিকেল অফিসার ৪ জন ও ২জন শিশু ও অ্যানেসথেসিয়া এবং একজন এইচএপিও রয়েছেন।
কাগজ কলমে বেতন প্রক্রিয়া সরিষাবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তালিকায় থাকলেও বাকি তিনজন ডা. আদর্শ রহমান কর্মরত আছেন জামালপুর সদরে ও ডা. মাজরিহা নাঈম মিশি কর্মরত আছেন ঢাকা ডেঙ্গু হাসপাতালে এবং ডা. ফাহমিদা জামান তিথি রয়েছেন অনুমতিবীহিন অনুপস্থিত। প্রায় একবছর যাবত এই চিকিৎসক সংকট। ফলে বদলি ডিউটি হিসেব করলে বাকি চিকিৎসক দিয়ে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও সেবিকারা। রোগীরাও অনেক অপেক্ষা করে কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে অন্যত্র সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা অনেকেই জানান, ‘বহির্বিভাগে ডাক্তার পাওয়া যায় না। টিকিট কেটে অনেকক্ষণ ডাক্তারের অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়। জরুরি বিভাগে ডাক্তার অন্যকক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে আসতে হয়। তাছাড়া ভালো কোন বিশেষজ্ঞ না থাকায় জেলার হাসপাতালের দিকে ছুটতে হয়।
এই হাসপাতালে গাইনী কোন ডাক্তারও নেই, অপারেশন বাহিরের কোন ক্লিনিক থেকে করতে হয়। এছাড়াও হাসপাতালে ভিতরে অনেকটা গন্ধ করে, রোগী এবং স্বজনদের টিকা মুশকিল। নিরুপায় হয়ে রোগীরা জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ও অন্য ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হন।
এদিকে হাসপাতালে একদিনে তিনটি গর্ভবতীর অপেরশন করার মত কৃতিত্ব রয়েছে। এছাড়া এক মাসে প্রায় শতাধিক ‘নরমাল ডেলিভারি’ করতে তারা সার্থক হয়েছেন। গত ৬ মাস যাবত গাইনি চিকিৎসকের বদলির কারণে হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসব কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালে ওয়ার্ড বয়ের সংখ্যা খুবই কম।
যেখানে প্রয়োজন তিনজন সেখানে রয়েছে দুজন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আয়া যেখানে প্রয়োজন সাতজন সেখানে আছেন একজন। এসব সংকটের ফলে হাসপাতালের সেবার মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। এসব প্রতিকূলতা মধ্যেও গতবছর চিকিৎসা সেবাতে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন সরিষাবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
এ-বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রবিউল ইসলাম জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন রোগে প্রায় শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। ৫০ শয্যা আসনে ভর্তিকৃত রোগীদের ফ্লোরে বেড করে দেয়া হয়েছে। এখন প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় তাদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রায় একবছর যাবত এমন অবস্থা। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনা উচিৎ।
এ-ব্যাপারে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি স্থানীয় এমপি আব্দুর রশিদ স্যারকেও অবগত করা হয়েছে। সংকট কাটিয়ে খুব দ্রুত চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধি হবে বলেও তিনি জানান।
টিএইচ